সৈয়দ আহমদ শামীমের কবিতা
জন্ম : পতেঙ্গা, চট্টগ্রাম।
কবিতার বই : অবলীলাদের বাড়ি ও অনেতিহাসের লোকগান।
একবার যাত্রীটি নেমে ভাড়া মিটিয়ে চলে গিয়েছিল
আমি তার জন্য দীর্ঘ অপেক্ষা করেছিলাম
আজকের জন্য নয় কখনও একবার তার জন্য
আমার অপেক্ষার মায়া ও মূল্য আছে মনে হল
তাকে জীবনভর আর একবার পাব না না পাব
সেই কথা নয় আমার ইচ্ছা হয়েছিল বলে
তার জন্য দীর্ঘ অপেক্ষা করেছি
সড়কের পর সড়ক আর সড়কের পাশে সড়ক
কত মায়াময় বাড়ি নগরে আজ আর প্রাচীন ইটের
আমি এক রিকশাঅলা আমি বসে টানি প্যাডেল
আমি বসে থাকি যাত্রীর পাশে
অপেক্ষা করি নেমে যাওয়া লোকেদের মায়া লাগে বলে
তারা ভাড়া দিয়ে গেছে আসবে না
আমাকে তারা ঠকায়নি
আমি এমনি বসে আছি
পুলিশ জানে আমি কী আনন্দে মানুষের বাড়ি বাড়ি সহাস্য চলি
আমি বঞ্চনা করি না আমার আত্মা, অপেক্ষা করি
২.
সিম্যন দ্য ব্যভ্যুয়া
আমি কাঁদি জন্মরহিত করে আসা শিশুটির জন্য
সার্ত্রে ইজ মাই ট্রু সুপিরিয়র
মাতৃত্বের রহস্য কোটরে আমি যে সিগ্রেটের অগ্নি ফেলে অগণ্য ভ্রƒণ পুড়িয়ে ফেলেছি
সেই শিশুগুলো আমার নাভিমূলে জন্ম নিয়ে হৃদয়কে প্রতি পল পল ছারখার করে দিচ্ছে
ও নারীকুল
গার্হস্থ্য উঠানে ফেরো
আই মোর্ন ফর মাই আনবর্ন চিলড্রেন
৩.
দুটি রোমানিয়ান গার্ল রাত করে ফিরে যাচ্ছে
এন্ড্রুটেইট জানতে চাইল
ট্যাক্সিচালক বলছে,ওরা রোমানিয়ান বালিকা
রোমানিয়ান বালিকার গায়ে কেউ আঘাত করবে না
রোমানিয়া দরিদ্র দেশ
ধনী টেইট বিশাল শীতল বরফের সাথে বাড়ি খেলেন
দরিদ্র দেশ রোমানিয়া
এহেন ধনী সভ্যতা তারা কোথায় পেয়েছে
আজ জুমার পরে এদিকে পতেঙ্গা এলাকায়
অচেনা সুহৃদের মতো বিকেল নেমে আসতে লেগেছে
ব্রিটিশ পিয়ার্স মরগ্যান অভিজাত ভাষা আর অর্গানাইজ সেকুলার বৈদগ্ধ দিয়ে জাপটে রেখেছে টেইটের গলা
ছুটে গিয়ে টেইট বলছে ফ্যামিলি বাচ্চা-কাচ্চা প্লিজ মরগ্যান ফ্যামিলি পরিবার রোমানিয়া দরিদ্র দেশ মরগ্যান, আমরা আদব হারিয়ে ফেলেছি পিয়ার্স
পতেঙ্গার দিকে কী অসাধারণ বিকাল এসেছে
৪.
জ্ঞানপূর্ণ কথা যখন দুরূহ হয়ে গণগ্রন্থাগারে ঢুকে পড়ে আছে
আমি ওই মুখো হতে পারি না
কোতোয়ালি মোড় হতে যারা কলা কিনে আনবার পথে উৎসাহে আরব খেজুরের দামদর করে
মধ্যবয়সী নারী ঠায় দাঁড়িয়ে এক একটি বাস ধরতে পারে না বলে
আল্লাহর সাথে একআধটা মুচকি হাসে, আমি পাশে যেয়ে এই দরিদ্র মুখর কৃতজ্ঞ জীবনের
বরকত হাসিল করি মানুষের এই অন্তঃআত্মীয় ভাবের কোনো বিলয় হবে না
মা জানতেন না আমার স্কুলের গণিত টিচারের নাম
তিনি মধুভাত রেঁধে দিতেন
সে এক রূহানি দুনিয়া আমাদের টিনশেড বিলোপ বাড়ির চারধার উত্তরবঙ্গের
ভিখারি দল উড়ে এসে মায়ের আঁচলে বসে হেসে হেসে দারিদ্র্য বিলায়ে যেত
৫.
আমি এক নিগূঢ় কৌশলের ভিতর একটা একটা শব্দকে নিয়ে বসাই
অতীতে আমার মন চাইত শব্দ স্বয়ং হয়ে উঠুক
কল্পনার নাভির ওপর বসে পাহারা দিতাম শব্দের লীলা হয়ে ওঠার ছল
ভাষার সাবলীল নৈরাজ্যের কোলে বসেছিলাম তীরন্দাজ
অগম্য ভ্রমণ বিস্তারের পর আমি পাই নাই আত্মার নাভিমূল
শব্দরা ভাষার রমণে নিয়ে আমারে স্বয়ং স্বপন্থা অভিহিতেছে
ভাষার অনির্দ্বিধে যেয়ে
আমি একদিন সংশয় আনন্দের তার কেটে দিয়েছি
৬.
দৃষ্টি ক্ষুদ্র করে আনো
বৃহৎ দুঃখের লগ্ন নিও না মনু
জীবিকামগন থেকে চোরছেঁচড় সাদামাটা হয়ে থাকো
তোমার দুর্গতি হলো তুমি আজো কদম মোবারক মসজিদের পাশ ধরে সেই প্রাচীন আন্দরকিল্লা সড়কে সাতাশি ঈসায়ী সালে শাহনাজ রহমতুল্লাহর কণ্ঠ নকল করে ভাবো যে সময় তোমার বাসনার লগ্নের সাথে মিশে মিশে আরো ধীরে হাঁটতে হাঁটতে বকশিবাজার কী একটা গাছ ছিল পাখপাখালি ভরা দুপুরে দোকানভর্তি শার্ট পিস আর একটু আগালে অভয়মিত্রঘাট ঘোলা কর্ণফুলীর জল ফের নৈরাজ্যের সুর বিপরীতে নিউমার্কেট আবার প্যান্টপিস পাশে শাহীনের গহন অভিরুচি কারেন্ট বুকসেন্টার আর তুমি গ্লোবাল পিস আর মওদুদীর কটাক্ষ অভিসন্ধি আর স্টারডাস্ট কত কানাগলি হয়রান শেষে কেউ যদি হোটেল ডায়মন্ড একপিস কাটলেট খাওয়ায়!
হায় তুচ্ছ তোমার মানবজনম তোমার বাপে জলসা সিনেমার বিপরীত রাস্তার ফুটপাথ মার্কেট থেকে একবার না কিনে দিয়েছিল একপিস রেডিমেড প্যান্ট তিরিশ টাকায়!
সেই খুশি তুমি আর পাইবা জীবনে, কিসের কবিতা কলা, সেই হাসি তুমি আর হাসবা জীবনে