তুমি লিখে যাচ্ছ
প্রবঞ্চনার দলিল
তুমি লিখছো দ্বান্দ্বিক দলিল
তোমার ভিশনযুক্ত প্রথম অনুচ্ছেদ
বিমুক্ত পাখির মতো ডানা ঝাপটায়।
কাউন্টার অনুচ্ছেদের মতো পরক্ষণে
বেমালুম ভুলে যাও আদর্শবাদিতা
যেন কপট প্রণয়ী গাঁথে প্রেমোপাখ্যান;
ঝোপের আড়াল থেকে বেরিয়ে আসে গোয়েবলস
গ্যাস চেম্বারে বসিয়ে দেয় বোধ ও বিবেককে।
চারপাশ ঘিরে দাঁড়িয়ে থাকে মুসোলিনি চেঙ্গিস,
আবু লাহাব এগিয়ে আসে প্রস্তর হাতে।
তুমি হয়ে যাও আত্মপ্রবঞ্চিত প্রেমিকার উপমা,
গুমোট জিঘাংসাগুলো রুদ্ধশ্বাস হয়ে
বেরিয়ে আসতে থাকে বারুদের মতো।
তুমি লিখে যাচ্ছ প্রেমিক প্রবঞ্চনার দলিল।
তাঁর কোনো মূর্ত ছায়া ছিলো না
তাঁর কোনো মূর্ত ছায়া ছিলো না
ছিলো না নকলিস্ট কার্টুনিস্টের উল্লম্ফনের খোরাক
তিনি ছিলেন মুক্ত বিশ্বের স্নিগ্ধশীতল ছায়া
থোকা থোকা অন্ধকারে ঠিকরে পড়া সূর্যের ছায়া
অমাবস্যার কোলে মূর্খতার নগ্ন উল্লাসে জোছনার ছায়া।
তাঁর তেমন কোনো স্বজন ছিলো না
তিনি ছিলেন অনাথ পৃথিবীর পরম প্রিয়জন
বাক-অপহৃত বিশ্ববিবেকের বেদনাভাষ্য-দূত
গোলামির শৃঙ্খলে স্বাধীনতার পরম মমতা
কালো ও সাদার দিঘল ফারাকে সাম্যের দৃষ্টি-সজল।
তাঁর দুদোল্যমান কোনো ক্ষয়িষ্ণু ছায়া ছিলো না
মৃত্যুহীন সুন্দরের আকাশে তিনি ছিলেন সত্যের ছায়া
তাঁর অমৃত ভালোবাসার স্তবক ঘিরে ছিলো
জাহেলি বিদ্রƒপের বিপুল হাসি
অথচ ছিলো না কোনো বেয়াদব ছায়াদস্যু
বিস্ফারিত নেত্রে হিংসুটে তুলির রক্ত-আঁচড়
ছিলো না শিল্পের ব্যানারে হৃদয় ক্ষরণের উল্লাস।
অথচ তুমি আজ সেই নির্মম ফুৎকারে দম দিচ্ছ
ঘাম ঝরাচ্ছ শতকোটি হৃদয়ের বিশ্বাস নিভিয়ে দিতে
অঘোষিত ক্রুসেডের অগ্নিলাগাম
অরক্ষিত করতে চাইছ
রাতের বজ্রাহত ধ্বনিতরঙ্গে লিখে দিতে চাইছ
নশ্বর নৈপুণ্যের কিন্নর কণ্ঠ।
বুভুক্ষু বন্দরে যাঁর ত্রাণ ছিলো বিশ্বজনীন
পরবিশ্বাসে যে হাত ছড়াতো সুরক্ষার অযুত রশ্মি
তুমি তাঁকেই পরাতে চাইছ অপবাদের ছিন্ন মালা।
সর্বশ্রেষ্ঠ মানুষের মূলত কোনো ছায়াপাত ছিলো না
তিনি ছিলেন তোমার মতো দুর্ভাগার ভাগ্য-ছায়া
অথচ কোন অরক্ষিত সাহসে
তুমি সেই আমূর্ত ছায়ার খেলায়
গ্লোবাল হেইট ছড়িয়ে দিচ্ছ।
জ্বলছি জলের প্রজ্বলনের মতো
আমি জ্বলছি জলের প্রজ্বলনের মতো
কখনো দেশলাই-হৃদয়
কখনো বারুদগন্ধী মৃত্তিকা
কখনো-বা শিল্পতুলির মতো দাবানল
আমি জ্বলছি নিসর্গনিশিন্দা
জ্বলছি স্বপ্নচ্যুত ইস্পাত-ইচ্ছের মতো
সবুজ সম্ভাবনার চোখ থেকে গড়িয়ে পড়া
অগ্নিলাভার মতো পোড়া অশ্রু
আমার যাত্রাপথে
থমকে যাওয়া স্রােতের মতো দাঁড়িয়ে থাকে
সকালের বিবস্ত্র আলো
দুপুরের উল্লাসহীন রোদ
আর সন্ধ্যার ক্লান্তিহীন পোশাক
আমি চলছি বিরতিহীন গতির
নৈঃশব্দ্য-ধ্বনির মতো
জ্বলছি উপুড় হওয়া চাঁদের নিচে জেল্লার মতো
আমার আকাশে যৌবনামেঘের বিদ্রƒপ
কাদামাটির ঠিকানায় দিয়েছি পত্র-প্রযত্ন
ললাটে লিখেছি ‘পরিযায়ী-গিনিপিগ’ নাম
আমি মূলত ভিটেমাটিহীন উদ্বাস্তু এক
আমার একহাতে নুয়েপড়া পলাশীর প্রান্তর
অন্যহাতে রক্তাক্ত নদীর মতো কারবালা
বেনামি ঝড়ের মতো আছড়েপড়া নিশ্বাস
আমি নিজদেশের সন্ধানে নিমগ্ন-নিরুদ্দেশ
আমি মধ্যরাতে হারিয়ে যাওয়া ‘প্যারাডাইস লস্ট’
ডাহুকের ছেঁড়াপালকে বজ্রাহত সুর
সমুদ্রমন্থনে ডিসকভারি ‘ডেস্ট্রয়ার’
আমি বহুকাল ধরে পুড়ছি তোমার চোখের উনুনে
আমি জ্বলছি
বাসরত্যাগী ‘হানযালা’র প্রেমের মতো
জমাটপাহাড়ের নিচে পারমাণবিক চুল্লির মতো
আমি জ্বলছি রাতের পাঁজরে, দিনের ঔরসে
আমি এভাবেই জ্বলি,
জ্বলছি যুগযুগ ধরে;
তোমার উন্মুক্ত বন্দরে।
রুদ্রশরীর
রুদ্রশরীরে কে য্যানো কথা কয়। অনাবাদি মাঠের কিশলয়। ভ্যাপসা রোদের ঘ্রাণ ছিলো শুধুই নিয়তি। শালবনে হারালো যে শালিক, সেখানে মুরদার মতো বয়েছিলো আহত নিঃশ্বাস।
জলে জ্বলে দাবাননল। মেঘ-ঘন কলাবতী। গুটিয়ে নাও খরার বেসাতি। বিবাগীরাত ভেঙেচুরে কে গায় দ্যাখো সেলাহের গান।
রুদ্রশরীরে কে য্যানো কথা কয়। জলাবর্তে জেগেছে কে আবার। অসহ্য এ এন্তেজার।
বৃষ্টির ভারে নত হয়েছে যে ফুল
বৃষ্টির ফোঁটার ভারে নত হয়েছে যে ফুল
বলিও তারে এই প্রেমিকের কথা
যার গন্ধ মেখে খুশবু জলের ঢেউয়ে ছলাৎ ছলাৎ
হৃদয় উঠোনে তার লিখে দিও এই পথিকের নথি।
বাগানময় বিরান মৌসুমে
যে বুনে ফসলের বীজ
শোনাও তারে অভিন্ন হৃদয়ের কবিতা,
নদীস্রোতে জেগে ওঠা চরের মতো
যার বক্ষপাঁজরে লেখা খরার অভিধান
রাতের অশ্বপিঠে যে সওয়ার চলেছে ক্লান্তিহীন
গুমোট থেকেছে অভিমানে বসন্ত-আকাশ
সেই ধূপছায়া বাদামি উৎসবে
ঝরাও তারে রিনিঝিনি শ্রাবণের মতো।
আগুনের যে শিখা হয়েছে মৃত্তিকামুখী
দখিনা হাওয়ার দাপটে যে শাখায় লেগেছে কম্পন
রাতের ট্রেনের মতো আন্ধার ভেদ করেছে যে গতি
তার কাছে রেখে যেও এই গীতিনন্দন।
না না এই ভূকম্পিত বুকের তুফান
তার বৃক্ষে দিওনা তুলে
শুধু বলিও তারে এই প্রেমিকের কথা
বৃষ্টির ফোঁটার ভারে নত হয়েছে যে ফুল।