চৌধুরী গোলাম মাওলার কবিতা
জন্ম : ২ এপ্রিল, ১৯৫৯। নোয়াখালী জেলার সদর থানার অন্তর্গত ঘোষবাগ ইউনিয়নের নবাবপুর গ্রামে।
কবিতার বই : বুক পেতেছি জলপ্রপাতে; হ্যাঁ, আমার সর্বাঙ্গেই প্রেম।
পাড়ি
নিজের পায়েই দিতে চাই পাড়ি
না হই যেন কারো বোঝা
তোমা হতে জানি এসেছি প্রভু
তোমার কাছেই যাবো সোজা॥
যা দিয়েছো সদা তাতেই খুশি
ছিল যে এ মন অমলিন
কী পাইনি তা তুমি ছাড়া মালিক
কেউ না জানুক কোনো দিন
সাধ্যের অতীত চাইনি কিছু
পরিতৃপ্তিতে তাক্বওয়া খোঁজা…
তোমা হতেই জানি এসেছি প্রভু
তোমার কাছেই যাবো সোজা॥
হই নিতো সাদা, শ্যামল দেশে
টানাপোড়েনের ঘরে
অনুযোগ কিছু করিনি তো প্রভু
অর্ধ কী অনাহারে
শত সহ¯্র বর্ষ পরে
যোজন যোজন দূরে
নবীজির নাম শুনেছি ক্ষীণ
অন্তরে মৃদু সুরে
সেপথে চলি ঝেড়ে দ্বিধা-দেরি
পাবো ক্ষমা অথৈ গুনাহর বোঝা…
তোমা হতে জানি এসেছি প্রভু
তোমার কাছেই যাবো সোজা॥
নিমেষের কবিতা
এক.
স্বপ্নের দেশ মানে কি জানো?
এসো হাত ধরো, যাই-
জল-ঝরনার কোলাহলে।
বাতাসে ঘূর্ণি, বুনো ঝড়ো বেগ
মৃত্তিকা ছুঁয়েছে আবেগ
এসো বসি এই সতেজ ঘাসে,
অবারিত মাঠে,
অনিন্দ্য জায়নামাজে …।
দুই.
হিরণ¥য় সূর্য অস্তপাটে;
এখনই উঠবে চাঁদ
যাবে কি ছুঁতে?
চঞ্চলা জোনাকির দল
আঁধারের গায়
উতলা করে এই মন।
চলো তবে যাই আরো দূরে
নক্ষত্রের দেশে
ভালো বাসতে বাসতে একদিন পৌঁছে যাবো আরশের কাছে।
তিন.
কার পথ চেয়ে থাকো রে পাগল মন?
খেলাঘরে বয় সুবাতাস
পেরিয়ে আমলকীর বন
ঝিরিঝিরি উড়ে আসে তেঁতুল পাতা
মস্তিষ্কের ভেতরে কী যে উড়োউড়ি!
এলোমেলো বৃষ্টিতে ভিজে যায় স্মৃতির খাতা;
কালবোশেখীর ছেঁড়া ঘুড়ি…
এই থেবড়ো মাটির ভাঙা ঘাটে
বসে থাকি নির্বিকার-
জানি আসবে না কোনো তরী আর
তবু এখানেই সারা পৃথিবীর ক্রন্দন,
প্রশান্তিও এখানে দেখো,
নিভৃতে বেঁধেছে ঘর।
গহিন রাতে
স্তব্ধ গভীর রাত
নিদ্ কেটে গেছে হায়
শুধু হই একাত ওকাত
কে তুমি ডাকো আমায়
তৃষিত বুকে ঢালো শীতল প্রপাত॥
সম্বিত আসে ফিরে
এদিক ওদিকে চাই ঘুরেফিরে
অধরা নিরলে
পাই না দেখিতে
সচকিত দেহ-মন ভাঙে অবসাদ॥
নিবিড় দরদে
আলতো পরশে
যাও জাগিয়ে, চিনি তোমায়
অদেখা আড়ালে
নিভৃতে নিকটে
রেখেছো চিহ্ন অসীম মায়ায়
পারিনি ডাকতে
সিজদায় নুয়ে অঝোরে কাঁদতে
মুছে দাও পাপ
এই ফরিয়াদ
হাত ধরে নাও তুলে, দিও জান্নাত।
শৈশব স্মৃতিরা
আমার নারকেল পাতার চশমা কই
পাটিপাতার বাঁশি ওই
হারিয়ে গেছে কোন্ সুদূরে
পিছন পানে তাকিয়ে রই।
গাঁয়ের শিশু বাজায় নাকি
আম আঁটির ঐ ভেঁপুটা
কুড়ায় ভোরে কামরাঙা জাম
আমলকী -আম- বরোই টা?
দখিন বিলে ধানের খেতে
পাগলা হাওয়া উদাস বয়
সুতোকাটা ভোমরা-ঘুড়ি
যায় হারিয়ে দূরের গাঁয়…
হারিয়ে গেছে ….
পালকি দোলা দুলাহ্র মিছিল
রঙিন কাগজ নকশা ফুল
কান্নাভেজা কনের বিদায়
কর্ণে নাচে সোনার দুল্ …
মেঘের ডাকে ঘূর্ণিচালে
নোনা জলে ডুবা আল্
পিছন চলি ডুলা হাতে
বড়োরা সব ছুঁড়ছে জাল …
কোথায় গেলো সোনার সুদিন
বাথানবাড়ি বালুরচর
শুকিয়ে গেছে তালদীঘিটা
সাঁতরে কাটা দ্বিপ্রহর
আয় সাথীরা ফিরিয়ে আনি
ছোট্টবেলার রঙিন মুখ
দাঁড়িয়াবান্ধা গোল্লাছুট আর
কুস্তি লড়াই হৈ হুল্লোড়
হারিয়ে গেছে …
আজ আসে না কেউ তো ছুটে
হারিয়ে গেছে দেশান্তর!
প্রিয় মুখের কেউ বা গেছে
প্রিয় মাটির আঁধার ঘর।
পাতার চশমা-ঘুড়ি-বাঁশি
বাথান-বাড়ি, রঙিন মুখ
দীর্ঘশ্বাসেও পাই না ফিরে
চাপা কান্না লুকিয়ে রই।
হারিয়ে গেছে …