জন্ম : ২৮ জানুয়ারি, ১৯৬৭।
পানিসাইল, বীরভূম, পশ্চিমবঙ্গ, ভারত।
কাব্যগ্রন্থ : কোথায় পা রাখি (১৯৯৪), বৃত্তের ভেতরে জল, জ্যোৎস্নায় সারারাত খেলে হিরণ্য মাছেরা, উন্মাদ বিকেলের জংশন, জ্বরের তাঁবুর নিচে বসন্তের ডাকঘর, প্রত্নচরিত, নির্ঘুমের হ্রস্ব ধ্বনি, আকাক্সক্ষার ঘরের জানালা, সভ্যতা কাঁপে এক বিস্ময়ের জ্বরে ইত্যাদি।
ব্যবসা-বাণিজ্য
তাপ-অনুতাপ এখন আর কিছুই পোড়ায় না
বরফের মতো ঠাণ্ডা হয়ে গেছে হৃদয়
বীজ পড়লেও অঙ্কুরোদ্গম হয় না
শুধু হাটে ঢোকার মুখে আটচালা নির্মাণ করে
ব্যবসা-বাণিজ্যে দিনপাত হয়
খদ্দের আসে, খদ্দের যায়
কেউ কেউ হাঁটুর ওপরেও কাপড় তোলে
কেউ কেউ মুখ ফসকে বলে দেয়
লুকিয়ে রাখা রাতের তরবারির খবর
সত্য
সত্য আজ ঢেকে রাখবে না কিছু
যে যা চায় তাকে তা দেবে
নিজে শুধু বালিশের মতো ব্যবহৃত হয়েছে এতদিন
তার ওপর মাথা নিশ্চিন্তে ঘুমিয়েছে
তাকেই জড়িয়ে ধরে বাঁচতে কিংবা মরতে চেয়েছে
পৃথিবীর সমস্ত ব্যর্থরা
আলো নিভিয়ে দিক সবাই
সত্য রবীন্দ্রনাথের কাছে যাবে না
সত্য নিউটনের কাছে যাবে না
সত্য সাইকেল নিয়ে আজ পাড়া ঘুরতে বেরোবে
স্নেহাদের বাড়ির পাশে নরম তুলোর বালিশ হয়ে
অপেক্ষা করবে।
রূপকথারা
আর কাঁদতে পারি না
আমার কান্নারাও বৃদ্ধ হয়ে গেছে!
কতটা পথ এসেছি তবে?
পিছন ফিরে দেখি শুধু ঝোপঝাড়, গিরিখাত, গুহার সুড়ঙ্গ
শেয়ালেরা স্মৃতির হাড় চেবাচ্ছে
ময়ূর উঠে গেছে কল্পনার ডালে
রূপকথারা চূর্ণ হয়ে ছিটকে আছে পথে
আর একটু এগিয়ে গেলে কার অতিথি?
সিঁদুর রাঙা সন্ধ্যা এসে কোলে তুলে নেবে
রূপকথারা কি সাঙ্গ হবে তবে?
ঝরনার জন্য ব্যাকুল হয়ে আছি
চেঁচাতে পারি না ‘তৃষ্ণা পেয়েছে’ বলে!
ক্যামেরা
বিজ্ঞাপনে সম্পূর্ণ আসে না
তাই বিজ্ঞাপনের বাইরেও হুক খুলতে হয়
চিত হতে হয়
পা তুলে দেখাতে হয় ভঙ্গি
ক্যামেরা তাকিয়ে থাকে সেদিকেই
ক্যামেরারও ইচ্ছে হয় একবার উবুড় হতে
এক একবার অন্ধকারের ভেতর হারিয়ে যেতে
ক্যামেরা জানে অন্ধকারের কোনো সামাজিকতা নেই
নঞর্থক
প্রকৌশলের কারখানায়
অস্ত্র শানাচ্ছে কৌশলেরা,
যুদ্ধে যাবে দেশ, যুদ্ধে যাবে ধর্ম
ধ্বংসের চূড়ান্ত নৃত্য হবে
তারপর শুধু হাহাকার
বেঁচে থাকবে আর কিশোর-কিশোরীরা?
মানবিক পাঠশালা থাকবে আর?
স্বপ্নের বারান্দায় কেউ বসে বসে রোদ পোহাবে?
কেউ চেঁচিয়ে বলবে আর : চা খেয়ে যাও!
এস এস কতদিন পর…!
সব প্রশ্নের উত্তরে শুধু একটি
‘না’ লিখে দেবে আমাদের সভ্যতা!
সীমাহীন কুয়ো
কুয়ো থেকে তুলে নাও আমাকে
এখানে চিৎকার কেউ শুনতে পায় না
মনুষ্য সম্পর্কিত রশিগুলি নামিয়ে দাও
রশিতে রশিতে বেঁধে ফেলি আমাকে
বনের ভেতর এই পরিত্যক্ত কুয়ো
বহু নির্জন ইতিহাস হয়ে আছে
সভ্যতার সিলেবাসে বহু বুনোফুল ফোটে
আমিই ফুটি না শুধু কুটিল কুয়োর অন্ধকারে
আমার হাতেও কুঠার ছিল
অন্ধকার কেটে কেটে সিঁড়ি বানাবার
আমার ইচ্ছার সূর্যে আলোকিত রথে
যুদ্ধে যাবার
আজ শুধু সীমাহীন কুয়ো
সীমাহীন পাতাল প্রবেশ
শিকড়
কোথাও শিকড় খুঁজছি
আমাদের শিকড়ের গান
মাটি খুঁড়ে খুঁড়ে তুলে আনি
মাটিতেই পোঁতা আছে অভিমান
ফুল-পাতা, দীক্ষাগৃহ ঈশ্বর ঈশ্বর
সমর্পণ জুড়ে মুগ্ধতা আর সমন্বয়
ইহজন্ম-পরজন্ম ইঙ্গিতবহ কাল
সংশয়ের ঘরকন্নায় বিশ্বাসের জল
বয়ে যেতে থাকে
অদ্ভুত নদীর মতো, ভাসমান এক একটি জীবন
তবুও শিকড় আছে, শিকড়ের টান
ফিরে ফিরে আসে
এই রাত্রির কাছে
এই সকালের কাছে
লেখা হয় অশ্রু
লেখা হয় শিশিরের ঝিকিমিকি